স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিভিন্ন গবেষণা ও চিকিৎকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, এই উপমহাদেশ বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশে বিয়ের পর নারীর স্ফিত হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে যৌনসঙ্গমকেই ধরে নেওয়া হয়। যা আদতে ঠিক নয়।
দায়ী নয় সঙ্গময়: বিয়ের পর নিয়মিত যৌনসঙ্গমের কারণে নারীর শরীরে হরমোনজনীত পরিবর্তন আসে, ফলাফল ওজন বৃদ্ধি। তবে এই ধারণায় কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বিয়ের পর নারীর স্তন কিংবা নিতম্বের আকার বাড়ে এমনটা কোনো গবেষণাই দাবি করে না। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, ওজন বৃদ্ধির পেছনে যৌনসঙ্গমের কোনো ভূমিকা নেই।
বীর্জের ক্যালরির পরিমাণ কম: ভারতীয় স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ আশা জেইন বলেন, “বিয়ের পর নিয়মিত যৌনসঙ্গম শুরু করলেই নারীর স্তন ও নিতম্বের আকার বৃদ্ধির কোনো শারীরিক কোনো কারণ নেই। আর সঙ্গমের সময় নির্গত বীর্জ পেটে গিয়ে হজম হওয়া কিংবা রক্তে মিশে যাওয়াও সম্ভব নয়। গড় হিসেবে সঙ্গমের মাধ্যমে নির্গত বীর্জের পরিমাণ হয় দুই থেকে তিন মিলিলিটার, যা মাত্র ১৫ ক্যালরি বহন করে।”
বিয়ের আগে ওজন কমানো: বিয়ের দিনক্ষণ পাকাপাকি হলেই হবু বর-বধূদের মধ্যে শরীরচর্চার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। বিয়ে জীবনে একবারই হয়, তাই এই দিনে ফিটফাট না থাকলে কি আর চলে! তবে বিয়ের পরদিন থেকেই সেই ‘ফিট’ থাকার ব্যাপারগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যায়। ফলে শরীরচর্চার জন্য নিজের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রাকে যে ছকে সাজিয়েছিলেন তা হঠাৎ ভেঙে পড়ে। ফলাফল ওজন বৃদ্ধি।
অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া: বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার খাওয়া, শ্বশুরবাড়ির আপ্যায়ন, আত্নীয় ও বন্ধু-বান্ধবের দাওয়াতে ভূরিভোজ, নতুন সঙ্গীকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খাওয়া ইত্যাদি আরও কত্ত কি! বিয়ের পর দম্পতি যেন সংসার জীবনে নয়, খাওয়ার প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। সকলের অপরিসীম ভালোবাসার এই খাবারগুলো জমেই ভুঁড়ি তৈরি হয়। ২০১২ সালের এক গবেষণায় এই তথ্য প্রমাণিত হয়, যার অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন দুই বা ততোধিক বছরের দম্পতিরা।
জীবনের নিরাপত্তা: পড়াশুনার পাট চুকিয়ে, কর্মজীবনে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে, পরিবারের সম্মতি নিয়ে তারপরই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন, সাধারণত সবার জীবনে এমনটাই হয়। জীবনের এই পর্যায়ে এসে আপনি যদি নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ সুখী মানুষ মনে করে থাকেন, তবে আপনার হয়ত ওজন বৃদ্ধিকে খুব একটা চিন্তার বিষয় মনে হবে না। সবই তো হল, এবার একটু মুটিয়ে গেলে কি-ই বা আসে যায়।
২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘হেলথ সাইকোলজি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এরকম পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা জানানো হয়, “জীবনের নিরাপত্তাবোধ ও সুখী দম্পতিদের সাধারণত ওজন বাড়তে দেখা যায়।”
শুধু কি নারীরাই? না, পুরুষরাও বিয়ের পর মোটা হন। ‘ওবেসিটি’ নামক এক জরিপে দেখা গেছে, বিয়ের প্রথম পাঁচ বছরে একজন নারীর ওজন বেড়েছে গড়ে ২৪ পাউন্ড। আর একই সময়ে পুরুষের ওজন বেড়ে গড়ে ৩০ পাউন্ড।
তাই বিয়ের পর মুটিয়ে যেতে থাকলে নিয়মিত যৌনসঙ্গমকে দায়ী না করে বরং অতিরিক্ত খাওয়া বন্ধ করুন। আর জীবনের নিরাপত্তা এসেগেছে মনে করে গা-হাত-পা এলিয়ে না দিয়ে বরং স্বামী-স্ত্রী মিলে খানিকটা শরীরচর্চা চালিয়ে যান প্রতিদিন।
পাঠকের মতামত